Feeds RSS

Friday, December 11, 2009

খনা কাহিনী - ২

'খনা' বাংলার লোকজীবন সম্পর্কে অনেক ভবিষ্যত বাণী করেছেন যা খনার বচন নামে পরিচিত। বচন গুলোতে আবহাওয়া , জ্যোতিষ ও ভু-তত্ব ভেদে শস্যের ক্ষয়ক্ষতি ও ফলন সম্পর্কে যে ধারণা দেয়া হয়েছে তার অনেকগুলোই বানীক সত্যের খুব কাছাকাছি। খনার উপদেশ গুলো দীর্ঘকাল বাংলার আবহাওয়া ও কৃষিকাজের দিকনির্দেশক হিসেবে আজও কাজ করছে।
খনা- নামটির সাথে যতটা পরিচিত বাংলার মানুষ ততটা অপরিচিত তার যাপিত জীবন সম্পর্কে। অনেকেই হয়ত জানেন না যে খনা ছিলেন একজন নারী। আ্যস্ট্রলজিতেও তার পারদর্শিতা ছিল কিংবদন্তিতুল্য। কিন্তু ধীরে ধীরে বচন রচয়িতা হিসেবে এক বিদুষী নারীতে পরিনত হন খনা। খনার আবির্ভাব সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা নেই তবে অনেকে বলেন ১২০০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি তাঁর আগমন ঘটেছিল। তাঁর ব্যাক্তিগত পরিচয়ও লোকসাহিত্য নির্ভর এবং সেক্ষেত্রে অনেক দ্বীমতও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে এক কিংবদন্তি অনুযায়ী তাঁর নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলি গ্রামে। শোনা যায় তাঁর পিতার নাম ছিল অনাচার্য । জীবনের অনেক খানি সময় বাস করেন সে সময়কার চন্দ্রকেতু রাজার আশ্রম চন্দ্রপুরে।
সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অপর এক কিংবদন্তি অনুসারে খনা ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। ভক্ষনে জন্মগ্রহণ করায় তাঁর নাম রাখা হয় ক্ষনা বা খনা। তখন বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের সভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরের জন্ম লাভের পর গণনা করে দেখেনযে তাঁর আয়ু মাত্র এক বছর। তাই পুত্রকে তিনি একটি পাত্রে করে সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌঁছায় এবং লালন পালন শেষে সিংহল রাজা যুবক মিহিরকে খনার সাথে বিয়ে দেন। সেখানে ধীরে ধীরে মিহির ও খনা জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করেন। এরপর মিহির সস্ত্রীক নিজভূমে তাঁর পিতার কাছে ফিরে আসেন এবং একসময় রাজা বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন এবং পিতার ন্যায় জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রতিপত্তি লাভ করেন। একদিন পিতা-পুত্র আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পড়েন। আমাদের বুদ্ধিমতী খনা সেই সমস্যার সমাধান করে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এতে রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে পিতার আদেশে মিহির খনার জীহ্বা কেটে দেন! এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্য ঘটে। কথিত আছে খনার জীহ্বা কেটে নেয়ার জন্য তাঁর শাশুড়ির সাথে দ্বন্দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
খনার বচন বাংলার লোক সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যান্ত্রীক জীবনের চরম জটিলতা আর পাশ্চাত্যের দূষিত হাওয়া আমাদের ধীরে ধীরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি অঙ্গন থেকে । ভুলে যাচ্ছি আমাদের কিংবদন্তিতুল্য কেবলমাত্র লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসা এক বিদূষী নারী খনাকে, যিনি নিজের এক জীহ্বার বিনিময়ে নিজের কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার কোটি কোটি মানুষের জীহ্বায়। যুগ যুগ ধরে মানুষেরা খনার বচন প্রকাশ করে চলেছেন নিজের জীহ্বা দ্বারা!
লেখাটি বাঁধ ভাঙার আওয়াজ থেকে নেওয়া

0 comments:

Post a Comment