খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। অনেকের মতে খনা নাম্নী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারীর রচনা এই ছড়া গুলো। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে।
১.
চাষে মুলা তার
অর্ধেক তুলা তার
অর্ধেক ধান
বিনা চাষে পান
২.
বিপদে পড় নহে ভয়
অভিজ্ঞতায় হবে জয়
৩.
উত্তর দুয়ারি ঘরের রাজা
দক্ষিণ দুয়ারি তাহার প্রজা।
পূর্ব দুয়ারির খাজনা নাই
পশ্চিম দুয়ারির মুখে ছাই।।
৪.
কপালে নাই ঘি,
ঠকঠকালে হবে কি!
৫.
নিজের বেলায় আটিঁগাটি,
পরের বেলায় চিমটি কাটি।
৬.
পুকুরে তে পানি নাই, পাতা কেনো ভাসে
যার কথা মনে করি সেই কেনো হাসে ?
৭.
ভাত দেবার মুরোদ নাই,
কিল দেবার গোসাঁই।
৮.
নদীর জল ঘোলাও ভালো,
জাতের মেয়ে কালোও ভালো
৯.
খাঁদা নাকে আবার নথ !
১০.
থাক দুখ পিতে,(পিত্তে)
ঢালমু দুখ মাঘ মাসের শীতে।
১১.
কি কর শ্বশুর মিছে খেটে
ফাল্গুনে এঁটে পোত কেটে
বেড়ে যাবে ঝাড়কি ঝাড়
কলা বইতে ভাংগে ঘাড়।
১২.
ভাদরে করে কলা রোপন
স্ববংশে মরিল রাবণ।
১৩.
গো নারিকেল নেড়ে রো
আমা টুকরা কাঁঠাল ভো।
১৪.
সুপারীতে গোবর, বাশে মাটি
অফলা নারিকেল শিকর কাটি
১৫.
খনা বলে শুনে যাও
নারিকেল মুলে চিটা দাও
গাছ হয় তাজা মোটা
তাড়াতাড়ি ধরে গোটা।
১৬.
ডাক ছেড়ে বলে রাবণ
কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।
১৭.
পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়
সেই বছর বন্যা হয়।
১৮.
মংগলে উষা বুধে পা
যথা ইচ্ছা তথা যা।
১৯.
পুত্র ভাগ্যে যশ
কন্যা ভাগ্যে লক্ষী
২০.
উঠান ভরা লাউ শশা
ঘরে তার লক্ষীর দশা
২১.
বামুন বাদল বান
দক্ষিণা পেলেই মান।
২২.
বেঙ ডাকে ঘহন ঘন
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান।
২৩.
আউশ ধানের চাষ
লাগে তিন মাস।
২৪.
যদি বর্ষে গাল্গুনে
চিনা কাউন দ্বিগুনে।
২৫.
যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।
২৬.
চালায় চালায় কুমুড় পাতা
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা।
২৭.
আখ আদা রুই
এই তিন চৈতে রুই।
২৮.
দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ
কমে না বাড়ে বারো মাস।
২৯.
সোমে ও বুধে না দিও হাত
ধার করিয়া খাইও ভাত।
৩০.
জৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।
৩১.
বাঁশের ধারে হলুদ দিলে
খনা বলে দ্বিগুণ বাড়ে।
৩২.
গাই পালে মেয়ে
দুধ পড়ে বেয়ে।
৩৩.
শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশার সফল।
৩৪.
মাঘ মাসে বর্ষে দেবা
রাজ্য ছেড়ে প্রজার সেবা।
৩৫.
চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়
তাল তেঁতুলের কিবা হয়।
অর্থ-কুয়াশায় আমের বোল নষ্ট হয়ে যায়
৩৬.
আমে ধান
তেঁতুলে বান।
অর্থ- আম বেশি ফললে ধান বেশি জন্মে। তেঁতুল বেশি ফললে ঝড় বন্যা হয়।
৩৭.
হইবো পুতে ডাকবো বাপ
তয় পুরবো মনর থাপ।
৩৮.
পারেনা .ল ফালাইতে
উইঠা থাকে বিয়ান রাইতে।
৩৯.
যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ
৪০.
চৈত্রে দিয়া মাটি
বৈশাখে কর পরিপাটি।
৪১.
সূর্যের চেয়ে বালি গরম!!
নদীর চেয়ে প্যাক ঠান্ডা!!
৪২.
সমানে সমানে দোস্তি
সমানে সমানে কুস্তি।
৪৩.
হোলা গোশশা অইলে বাশশা,
মাইয়া গোশশা অইলে বেইশশা
৪৪.
মেয়ে নষ্ট ঘাটে,
ছেলে নষ্ট হাটে।
৪৫.
আল্লায় দিয়া ধন দেখে মন,
কাইড়া নিতে কতক্ষণ।
৪৬.
যদি থাকে বন্ধুরে মন
গাং সাঁতরাইতে কতক্ষন।
৪৭.
কাল ধানের ধলা পিঠা,
মা'র চেয়ে মাসি মিঠা।
৪৮.
পরের বাড়ির পিঠা
খাইতে বড় ই মিঠা।
৪৯.
ঘরের কোনে মরিচ গাছ
লাল মরিচ ধরে,
তোমার কথা মনে হলে
চোখের পানি পড়ে!
৫০.
সোল বোয়ালের পোনা
যার যারটা তার তার কাছে সোনা।
৫১.
ছায়া ভালো ছাতার তল,
বল ভালো নিজের বল।
(বিয়াই'র পুত নিয়া সাত পুত গুণতে নাই।)
৫২.
যা করিবে বান্দা তা-ই পাইবে।
সুই চুরি করিলে কুড়াল হারাইবে।
৫৩.
খালি পেটে পানি খায়
যার যার বুঝে খায়।
৫৪.
তেলা মাথায় ঢালো তেল,
শুকনো মাথায় ভাঙ্গ বেল।
৫৫.
চৈত্রে চালিতা,
বৈশাখে নালিতা,
আষাড়ে.........
ভাদ্রে তালের পিঠা।
আর্শ্বিনে ওল,
কার্তিকে কৈয়ের ঝুল
৫৬.
মিললে মেলা।
না মিললে একলা একলা ভালা!
৫৭.
সাত পুরুষে কুমাড়ের ঝি,
সরা দেইখা কয়, এইটা কি?
৫৮.
না পাইয়া পাইছে ধন;
বাপে পুতে কীর্তন।
৫৯.
কাচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাস ঠাস!
৬০.
যুগরে খাইছে ভূতে
বাপরে মারে পুতে।
৬১.
দশে মিলে করি কাজ
হারি জিতি নাহি লাজ।
৬২.
যাও পাখি বলো তারে
সে যেন ভুলেনা মোরে।
৬৩.
ফুল তুলিয়া রুমাল দিলাম যতন করি রাখিও।
আমার কথা মনে ফইল্লে রুমাল খুলি দেখিও।
৬৪.
একে তে নাচুনী বুড়ি,
তার উপর ঢোলের বারি
৬৫.
চোরের মার বড় গলা
লাফ দিয়ে খায় গাছের কলা
৬৬.
ভাই বড়ো ধন, রক্তের বাঁধন
যদি ও পৃথক হয়, নারীর কারন।
৬৭.
জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা।
৬৮.
যদি হয় সুজন
এক পিড়িতে নয় জন।
যদি হয় কুজন
নয় পিড়িতে নয় জন
*(যদি হয় সুজন,
তেতুল পাতায় ন'জন।)
৬৯.
"হাতিরও পিছলে পাও।
সুজনেরও ডুবে নাও।"
৭০.
গাঙ দেখলে মুত আসে
নাঙ দেখলে হাস আসে (নাঙ মানে - স্বামী)
৭১.
ক্ষেত আর পুত।
যত্ন বিনে যমদূত।।
৭২.
গরু ছাগলের মুখে বিষ।
চারা না খায় রাখিস দিশ ।।
বন্যা, মড়ক, বৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি
৭৩.
আকাশে কোদালীর বাউ।
ওগো শ্বশুড় মাঠে যাও।।
মাঠে গিয়া বাঁধো আলি।
বৃষ্টি হবে আজি কালি।।
৭৪.
যদি ঝরে কাত্তি।
সোনা রাত্তি রাত্তি।।
৭৫.
আষাঢ়ের পানি।
তলে দিয়া গেলে সার।
উপরে দিয়া গেলে ক্ষার।।
হল (লাঙ্গল চালনা)
৭৬.
গাঁ গড়ানে ঘন পা।
যেমন মা তেমন ছা।।
থেকে বলদ না বয় হাল,
তার দু:খ সর্ব্বকাল।
গবাদি
৭৭.
যে চাষা খায় পেট ভরে।
গরুর পানে চায় না ফিরে।
গরু না পায় ঘাস পানি।
ফলন নাই তার হয়রানি।।
৭৮.
গরুর পিঠে তুললে হাত।
গিরস্থে কভু পায় না ভাত।।
গাই দিয়া বায় হাল
দু:খ তার চিরকাল।
ধান্যাদি
৭৯.
দিন থাকতে বাঁধে আল।
তবে খায় তিন শাল।।
বারো পুত তেরো নাতি।
তবে করো বোরো খেতি।।
রবি শস্যাদি
৮০.
মেঘ করে রাত্রে হয় জল।
তবে মাঠে যাওয়াই বিফল।।
৮১.
যদি থাকে টাকা করবার গোঁ।
চৈত্র মাসে ভুট্টা দিয়ে রো।।
৮২.
হলে ফুল কাট শনা।
পাট পাকিলে লাভ দ্বিগুণা।।
৮৩.
সকাল শোয় সকাল ওঠে
তার কড়ি না বৈদ্য লুটে
৮৪.
আলো হাওয়া বেঁধো না
রোগে ভোগে মরো না।
৮৫.
যে চাষা খায় পেট ভরে
গরুর পানে চায় না ফিরে
গরু না পায় ঘাস পানি
ফলন নাই তার হয়রানি
৮৬.
খনা ডেকে বলে যান
রোদে ধান ছায়ায় পান
৮৭.
গাছগাছালি ঘন সবে না
গাছ হবে তার ফল হবে না
৮৮.
হাত বিশ করি ফাঁক
আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ
৮৯.
যদি না হয় আগনে বৃষ্টি
তবে না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি
৯০.
যত জ্বালে ব্যঞ্জন মিষ্ট
তত জ্বালে ভাত নষ্ট
৯১.
যে না শোনে খনার বচন
সংসারে তার চির পচন৷
৯২.
শোনরে বাপু চাষার পো
সুপারী বাগে মান্দার রো৷
মান্দার পাতা পচলে গোড়ায়
ফড়ফড়াইয়া ফল বাড়ায়৷
৯৩.
চাষী আর চষা মাটি
এ দু'য়ে হয় দেশ খাঁটি।
৯৪.
গাছে গাছে আগুন জ্বলে
বৃষ্টি হবে খনায় বলে।
৯৫.
জ্যৈষ্ঠে খরা, আষাঢ়ে ভরা
শস্যের ভার সহে না ধরা।
৯৬.
আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল
তবে খায় বহু শাইল।
৯৭.
আষাঢ়ে পনের শ্রাবণে পুরো
ধান লাগাও যত পারো।
৯৮.
তিন শাওনে পান
এক আশ্বিনে ধান।
৯৯.
পটল বুনলে ফাগুন
ফলন বাড়ে দ্বিগুণে।
১০০.
ফাগুনে আগুন, চৈতে মাট
বাঁশ বলে শীঘ্র উঠি।
১০১.
ভাদ্রের চারি, আশ্বিনের চারি
কলাই করি যত পারি।
১০২.
লাঙ্গলে না খুঁড়লে মাটি, মই না দিলে পরিপাটি
ফসল হয় না কান্নাকাটি।
১০৩.
সবলা গরু সুজন পুত
রাখতে পারে খেতের জুত।
১০৪.
গরু-জরু-ক্ষেত-পুতা
চাষীর বেটার মূল সুতা।
১০৫.
সবল গরু, গভীর চাষ
তাতে পুরে চাষার আশ।
১০৬.
শোন শোন চাষি ভাই
সার না দিলে ফসল নাই।
১০৭.
হালে নড়বড়, দুধে পানি
লক্ষ্মী বলে চাড়লাম আমি।
১০৮.
রোদে ধান, ছায়ায় পান।
১০৯.
আগে বাঁধবে আইল
তবে রুবে শাইল।
১১০.
গাছ-গাছালি ঘন রোবে না
গাছ হবে তাতে ফল হবে না।
১১১.
খরা ভুয়ে ঢালবি জল
সারাবছর পাবি ফল।
১১২.
ডাঙ্গা নিড়ান বান্ধন আলি
তাতে দিও নানা শালি।
১১৩.
কাঁচা রোপা শুকায়
ভুঁইয়ে ধান ভুঁইয়ে লুটায়।
১১৪.
বার পুত, তের নাতি
তবে কর কুশার ক্ষেতি।
১১৫.
তাল বাড়ে ঝোপে
খেজুর বাড়ে কোপে।
১১৬.
গাজর, গন্ধি, সুরী
তিন বোধে দূরী।
১১৭.
খনা বলে শোনভাই
তুলায় তুলা অধিক পাই।
১১৮.
ঘন সরিষা পাতলা রাই
নেংগে নেংগে কার্পাস পাই।
১১৯.
বারো মাসে বারো ফল
না খেলে যায় রসাতল।
১২০.
ফল খেয়ে জল খায়
জম বলে আয় আয়।
১২১.
কলা-রুয়ে কেটো না পাত,
তাতে কাপড় তাতেই ভাত।
♣♣♣♣♣ ☼☼☼☼☼☼☼ ☺☺☺☺☺☺ ♠♠♠♠♠♠♠♠
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরিসীম। অধিকাংশের-ই জনক খনা। এখানে আমার সংগ্রহীত কিছু খনার বচন রেখে দিলাম। আপনাদের যদি এর বাইরে আরও জানা থাকে তাহলে Comment box এ Pasteকরুন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে হয়ে উঠতে পারে খনার বচনের অসাধারণ আর্কাইভ।
Monday, October 19, 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment